শুয়ে (বিছানায় শুয়ে) দোয়া বা কোরআন তেলাওয়াত করা কি জায়েজ?

উত্তর

প্রিয় ভাই/বোন,

ঘুমানোর আগে দোয়া করা; ইখলাস, ফালাক ও নাস সূরার মতো দোয়া-আয়াত পাঠ করা নবী করীম (সা.)-এর নিত্যকার অভ্যাস ছিল। হাদিস গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে বহু হাদিস রয়েছে। যেমন, হযরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সা.) ঘুমানোর আগে কী করতেন:


“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন তিনি তাঁর দুই হাত এক করে, তাতে ফুঁ দিতেন, অতঃপর

‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বি-রব্বিল-ফালাক, কুল আউযু বি-রব্বিন-নাস’




সে তা পড়ত, তারপর তার হাত দিয়ে তার মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে, যেখানে সে পৌঁছাতে পারত, তার শরীরের সব জায়গায় তা মাখত। সে তা তিনবার করত।”

বারা বিন আযিব (রাঃ) নবী করীম (সাঃ) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যার অর্থ হল:


“যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন নামাজের জন্য যেভাবে অজু করো, সেভাবে অজু করো, তারপর ডান দিকে কাত হয়ে শুয়ে এই দোয়াটি পড়ো:


‘হে আল্লাহ, আমি আমার নফসকে তোমার কাছে সোপর্দ করলাম। আমার কাজও তোমার কাছে সোপর্দ করলাম। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা ও তোমার ভয়ের কারণে আমি তোমার উপর ভরসা করলাম। আমি একমাত্র তোমার কাছেই আশ্রয় চাই এবং তোমার কাছেই আশ্রয় গ্রহণ করি। আমি তোমার অবতীর্ণ কিতাব এবং তোমার প্রেরিত রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম।’


যদি তুমি সেই রাতে ইসলামে দীক্ষিত হয়ে, ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করো, তাহলে তোমার শেষ কথাগুলো যেন এগুলোই হয়।”

2

উভয় হাদিসে দেখা যায় যে, এই দোয়াগুলি বিছানায় শুয়ে পড়ার পর পড়া হয়। নবী করীম (সাঃ) যেমন বসে বসে দোয়া স্বরূপ সূরাগুলি পাঠ করে নিজের পবিত্র শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন, তেমনি দ্বিতীয় হাদিসে বর্ণিত দোয়াটি শুয়ে পড়ার পর পাঠ করতেন বলে বোঝা যায়। এক্ষেত্রে শুয়ে পড়ার আগে পড়া যেমন সম্ভব, তেমনি শুয়ে পড়ার পরেও পড়া জায়েজ।

আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যাতে এ বিষয়ে একটি উক্তি রয়েছে:


“পাশ ফিরে শুয়ে কোরআন তেলাওয়াত করতে কোন দোষ নেই। তবে এসময় পা ছড়িয়ে না রেখে গুটিয়ে রাখতে হবে। বিছানায় শুয়ে কোরআনের কোন সূরা বা আয়াত তেলাওয়াত করতেও কোন বাধা নেই। তবে এসময় মাথা কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখা যাবে না। কারণ কম্বল এক প্রকার কাপড়ের মত। এভাবে না করলে তেলাওয়াত জায়েজ হবে না।”

3



পাদটীকা:

1 তিরমিযী, দু’আ: 21।

২ মুসলিম, জিকির: ৫৬।

৩. আল-ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যা, ৫/৩১৬।

(দেখুন: মেহমেদ পাকসু, পরিবারের জন্য বিশেষ ফতোয়া)


সালাম ও দোয়ার সহিত…

প্রশ্নোত্তরে ইসলাম

মন্তব্যসমূহ


জোকারস্টাইল

প্রিয় গাজিয়ানতেপবাসী ভাই/বোন,

ঘুমানোর সময় এবং বিশেষ করে ফজরের নামাজের ফরজ আদায়ের আগে এই দোয়াটি পাঠ করার পরামর্শ দিচ্ছি।

আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে, তাহলে প্রিয় নবী (সা.) এই দোয়াটি সুপারিশ করেছিলেন।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ঘুমানোর আগে এবং প্রত্যেক ফরজ নামাজের আগে এই দোয়াটি করি।

আশা করি আল্লাহ (সুবহানাল্লাহু ওয়া তা’আলা) আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন।

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন অথবা সদস্য হোন।

গাজিয়ানতেপের কাদরিয়ে

আমি একটা বইতে পড়েছিলাম যে, ঘুমানোর আগে তিনবার “আস্তাগফিরুল্লাহ আল-আযীম আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া আতূবু ইলাইহি” দোয়াটি পাঠ করলে, ওই দিনে করা গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়।

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন অথবা সদস্য হোন।

হাদিমুল কুরআন

একটি বিষয়কে এর চেয়ে সুন্দরভাবে আর বর্ণনা করা যেত না…

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন অথবা সদস্য হোন।

মুস্তফা আয়দিন

সম্ভবত আগে থেকে সতর্ক না করা এবং পরিণামে এটি অভ্যাসে পরিণত হওয়ার কারণে, আমি কিছুতেই উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারছি না। কিন্তু এ কারণে আমি বেশ দুঃখিত এবং নিজেকে দোষী মনে করছিলাম। উপরের ব্যাখ্যা আমাকে তুলনামূলকভাবে স্বস্তি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা আপনার উপর সন্তুষ্ট হোন।

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন অথবা সদস্য হোন।

ওর্স মেহমেত

আমি আরও জেনেছি যে উপুড় হয়ে ঘুমানো খুবই খারাপ। পৌত্তলিকরা নাকি এভাবেই ঘুমাতো। এখন আমি নিজেকে জোর করে হলেও চিত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করি। উপুড় হয়ে ঘুমানোর সাথে পৌত্তলিকতার কী সম্পর্ক থাকতে পারে?

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন অথবা সদস্য হোন।


সম্পাদক

সুন্নত: আমাদের নবীর করা, বলা, আচার-আচরণ, সবকিছুর সমষ্টিকে সুন্নত বলা হয়। তাহলে, তাঁর সারা জীবনের সব কাজকেই সুন্নত বলা যেতে পারে।

ফিকহ গ্রন্থে উল্লেখিত সুন্নত শব্দের অর্থ হল, “করলে সওয়াব আছে, না করলে গুনাহ নেই”। যেমন, ডান হাতে খাওয়া, দাঁত পরিষ্কার করা, দাঁড়িয়ে না খাওয়া ইত্যাদি।

কিন্তু যদি আমরা সুন্নাহ শব্দটিকে ব্যাপক অর্থে গ্রহণ করি, তাহলে তা নবীজির করা সবকিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। এক্ষেত্রে, আল্লাহর আদেশ ও নিষেধও সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। যেমন, নবীজি কি নামাজ পড়েছেন? হ্যাঁ। তাহলে নামাজ পড়াও একটি সুন্নাহ।

অতএব, সুন্নাহকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা প্রয়োজন হবে।

ফরয হল: আল্লাহ তাআলা যা অবশ্যই করতে বা বর্জন করতে বলেছেন। আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের সর্বোত্তম পালনকারী ও অনুকরণীয় হলেন আমাদের নবী (সাঃ)। আমরাও তাঁর অনুসরণ করে সর্বোচ্চ স্তরে নবীর (সাঃ) অনুসারী হতে পারি। যেমন: নামাজ পড়া, রোজা রাখা, ব্যভিচার না করা, হারাম না খাওয়া ইত্যাদি।

আবশ্যকীয় বিষয়সমূহ: আমাদের ধর্মের আবশ্যকীয় বিষয়সমূহ। যেমন, রাতের নামাজ তিন রাকাত পড়া আবশ্যক।

নফল হল: ইবাদত পালনের সময় ফরজ ও ওয়াজিবের বাইরে যে কাজগুলো করা হয়। যেমন, নামাজে কোরআনের কিছু সূরা পড়া ফরজ, কিন্তু সুবহানাকা দোয়া পড়া নফল।

আদব হল: একে আমরা শিষ্টাচারও বলি। খাওয়ার সময়, শোয়ার সময়, মসজিদে, টয়লেটে যাওয়া-আসার সময় (ইত্যাদি) দৈনন্দিন কাজ করার সময় যদি আমরা আমাদের নবীর (সা.) অনুসরণ করি, তাহলে আমরা সেই কাজকে আদব অনুযায়ী করেছি বলে গণ্য হবে।

ঘুমানোর আদব-কায়দা সংক্রান্ত সুন্নাতগুলো হল এই যে, এগুলো পালন করলে সওয়াব পাওয়া যায়, তবে এগুলো না পালন করলে দ্বীনের দিক থেকে কোন গুনাহ নেই। তাই উপুড় হয়ে ঘুমানো গুনাহ নয়। তবে তা বাঞ্ছনীয় নয়। যদি কাফেরদের অনুকরণ করার নিয়তে উপুড় হয়ে ঘুমানো হয়, তাহলে তা বিপদজনক। হাদীসে যে নিষেধের কথা বলা হয়েছে, তা এই অর্থেই হতে পারে। অন্যথায়, কাফেরদের অনুকরণ করার নিয়ত না রেখে, অভ্যাসবশত বা অলসতাবশত উপুড় হয়ে ঘুমানো গুনাহ হবে না।

তাহলে আমরা সুন্নতকে ফরজ, ওয়াজিব, নফল ও আদব এই ভাগে ভাগ করতে পারি। এই ক্রম অনুসারে সুন্নতের সর্বোচ্চ ও সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকারভেদ হল ফরজ, তারপর ওয়াজিব, তারপর নফল এবং সবশেষে আদব।

আমরা এটাকে মানুষের শরীরের মতো ভাবতে পারি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে। মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, মাথা ইত্যাদি। ঠিক তেমনি, আমাদের যে মূলনীতিগুলোতে ঈমান আনতে হবে, সেগুলো আমাদের আত্মার মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ডের মতো।

আমাদের শরীরের চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি ইন্দ্রিয় আছে। ফরজও ঠিক তেমনি। ফরজ হচ্ছে আমাদের আত্মার চোখ, কান, হাত, পা। যে ফরজ পালন করে না, সে হাত-পা-চোখ-কানহীন মানুষের মতো অপূর্ণ।

আমাদের শরীরেও আঙুল, ভ্রু, চুল ইত্যাদির মতো সৌন্দর্য ও অলঙ্কার রয়েছে। এগুলো না থাকলেও আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু এগুলো থাকলে আমরা আরও পরিপূর্ণ মানুষ হই। ঠিক তেমনি সুন্নতের নফল ও আদব অংশগুলোও আমাদের আত্মার অলঙ্কার ও সৌন্দর্য। এগুলো করলে অনেক সওয়াব আছে, না করলে গুনাহ নেই। ঘুমের আদবগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত।

সংক্ষেপে, ফরজ ও ওয়াজিব অংশগুলো অবশ্যই পালনীয় সুন্নত। আর নফল ও আদব অংশগুলো পালন করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়।

ঘুম এবং শিষ্টাচার সম্পর্কিত তথ্য পেতে এখানে ক্লিক করুন:

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন অথবা সদস্য হোন।

সর্বশেষ প্রশ্ন

দিনের প্রশ্ন