“যদি সে দিতে না চাইত, তাহলে সে চাইতে দিত না।” এই উক্তিটি কি হাদিস? সে যদি দিতে চায়, তাহলে আমাদের চাওয়া কেন পূরণ হয় না?

উত্তর

প্রিয় ভাই/বোন,


এই উক্তিটি হাদিস নয়।

মহান আলেম ও সুফি সাধকদের মধ্যে, একটি মহৎ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত একটি

শিষ্টাচারপূর্ণ কথা

এর মূল ফারসি ভাষায় এবং তা হল:


“যদি না হয় বাবা, না হয় দাদি।”

এর অর্থ হল:

“যদি সে দিতে না চাইতো, তাহলে সে চাওয়ার ইচ্ছাও দিতো না।”

(দেখুন: নুরসি, মেক্তুবাত, পৃ. ৩০২)।

এর অর্থ হল: আল্লাহ অসীম দয়ালু। তাঁর দয়ার নিদর্শনস্বরূপ তিনি তাঁর সৃষ্টিসমূহের, বিশেষত মানুষের, প্রয়োজনীয় সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। যেমন: মানুষের জীবনধারণের জন্য পানি, বায়ু, আলো, মাটি, খাদ্যের প্রয়োজন। দেখার, শোনার, চিন্তা করার, কথা বলার প্রয়োজন। আর এ সবই সৃষ্টি করা হয়েছে। এই অবস্থা, এই সবের অস্তিত্বের সাথে মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক, একটি যোগসূত্রকে স্পষ্টভাবে দেখায়। যেমন, চোখ সৃষ্টিকারী, সূর্য সৃষ্টিকারী, কান সৃষ্টিকারী, বায়ু সৃষ্টিকারী, খাদ্য সৃষ্টিকারী, পাকস্থলী সৃষ্টিকারী একই কারিগর। অতএব বলা যায়: যদি আল্লাহ মানুষকে দেখতে না চাইতেন, তাহলে তিনি তাকে দেখার ইচ্ছা ও দৃষ্টিশক্তি, চোখ দিতেন না। যদি তিনি খাদ্য দিতে না চাইতেন, তাহলে তিনি তাকে খাওয়ার ইচ্ছা দিতেন না। যদি তিনি মানুষকে বিবাহ করতে না চাইতেন, তাহলে তিনি তাদের মধ্যে বিবাহের অনুভূতি দিতেন না।

এইখানেই, উপরে বর্ণিত নিয়মটি, আল্লাহর অনন্ত করুণা, অসীম জ্ঞান ও অসীম ক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখান থেকে, মানুষের মধ্যে যে অমরত্বের বাসনা/চিরস্থায়ীভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা রয়েছে, তা তাদের অনন্ত জীবনের জন্য যোগ্যতার, এবং মৃত্যুর পর একদিন অবশ্যই পুনরুত্থিত হয়ে নতুন জীবন শুরু করার একটি স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।

বস্তুতঃ আল্লাহ তাআলা তাঁর অসীম রহমতকে পরকালের অস্তিত্বের একটি বলিষ্ঠ যুক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। সংশ্লিষ্ট আয়াতের ভাবার্থ নিম্নরূপ:


“আল্লাহ তাআলা নিজ দয়ায় কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে অবশ্যই একত্রিত করবেন বলে ওয়াদা করেছেন।”

(আল-আন’আম, ৬/১২)।

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:


“বলুন, যদি তোমাদের দোয়া না থাকে, তবে আমার রব তোমাদেরকে কি করে মূল্য দেবেন?”

(আল-ফুরকান, ২৫/৭৭)


“তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’”

(আল-মু’মিন, ৪০/৬০)।

এই উক্তিগুলো থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মানুষকে নিজের মুখাপেক্ষী করে, তাদের কাছ থেকে নিজের কাছে প্রার্থনা করতে বলা এবং তাদের প্রার্থনার উত্তর দেয়ার ওয়াদা করা, সবই আল্লাহর কাজ।

এই আয়াতগুলোর আলোকে বলা যায় যে, যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী কিছু দিতে না চাইতেন, তাহলে তিনি তাদের ইচ্ছা করার ক্ষমতা দিতেন না। যদি তিনি পেটের ক্ষুধার্ত আকুতিকে কবুল করতে না চাইতেন, তাহলে তিনি তাকে না ক্ষুধা বোধ দিতেন, না ক্ষুধা প্রকাশ করার ইচ্ছা দিতেন। অতএব, মানুষকে অনন্ত জীবন, অস্তিত্বের অনন্তকাল, প্রিয়জনদের সাথে চিরস্থায়ী সহবাসের অনুভূতি এবং আকাঙ্ক্ষা দানকারী আল্লাহ, অবশ্যই তাদের এই ইচ্ছার প্রতিদানও দেবেন। যেহেতু এই দুনিয়ায় তা নেই, তাই নিশ্চয়ই অন্য এক অনন্ত জগতে সেই ইচ্ছার প্রতিদানও থাকবে।

হ্যাঁ, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি এই জগৎকে দেখার ইচ্ছা না থাকলে আমাদের গর্ভে চোখ দিতেন? এই সুন্দর শব্দগুলো শোনার ইচ্ছা না থাকলে কি আমাদের কান দিতেন? এই দৃষ্টিকোণ থেকে, পরকালের অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল মানুষের আত্মায় নিহিত এই…

“অনন্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা”

থামুন।

অধিক তথ্যের জন্য ক্লিক করুন:

আল্লাহ তাআলা আমাদের কাছে দোয়া করতে বলেছেন, কিন্তু কেন তিনি আমাদের দোয়ার উত্তর ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে দেন? কেন তিনি আমাদের সব চাওয়া পূরণ করেন না?


সালাম ও দোয়ার সহিত…

প্রশ্নোত্তরে ইসলাম

মন্তব্যসমূহ


আর্নহেম

আমার জানা মতে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যখন হযরত আলী (রা.) হযরত ফাতেমা (রা.) এর উপর বিয়ে করতে চাইলেন, তখন তিনি বললেন, যদি সে বিয়ে করতে চায় তাহলে প্রথমে আমার মেয়েকে তালাক দিক।” কিন্তু তিনি এ কথা বলেছিলেন হযরত আলী (রা.) আবু জাহেলের মেয়ের সাথে বিয়ে করতে চাওয়ার প্রেক্ষিতে। এমনকি তিনি বলেছিলেন যে, নবীর কন্যা এবং কুফরের নেতার কন্যা একই ব্যক্তির নিকাহের অধীনে থাকতে পারে না। আর তারপর তিনি উপরের কথাটি বলেছিলেন। হযরত আলী (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং ফাতেমা (রা.) এর মৃত্যু পর্যন্ত আর কখনো এমন কিছু বলেননি। অন্যথায়, তিনি এবং সাহাবীরা অন্য স্ত্রী গ্রহণ করার সময় নিজের জামাতাকে আলাদা করে রাখতেন, তা ভাবা যায় না। অবশ্য, কিছুটা ভাগ্য এবং হযরত আলীর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে যা ঘটবে তা সম্পর্কে কম-বেশি অবগত হওয়াও আমার মতে একটি কারণ। এছাড়া, নিকাহের সময় এই অধিকার চাওয়া প্রয়োজন। অন্যথায়, অন্য কোন উপায়ে তা দাবি করা বেশ কঠিন।

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন অথবা সদস্য হোন।

সর্বশেষ প্রশ্ন

দিনের প্রশ্ন