বৈবাহিক সমতা
১) বলা হচ্ছে যে, আবু হানিফা বলেছেন, “মহিলার সমকক্ষ না হলে বিবাহ জায়েজ নয়।” সারাসি এ মতকে অধিক সতর্কতা অবলম্বনকারী মত বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, আবু হানিফার এই মতানুসারে, পরিবারের সম্মতি থাকলেও কি এই বিবাহ জায়েজ নয়? আবু হানিফার মতানুসারে উত্তর দিন।
২) হানাফী মতানুসারে, বিবাহে বংশগত সমতাও থাকা উচিত। এই মতানুসারে, বংশগত সমতা না থাকলে, যেমন ধরুন, একজন আরব কন্যা একজন তুর্কি পুরুষের সাথে বিবাহ করলে এবং উভয় পরিবারের সম্মতি থাকলেও, এমন বিবাহ জায়েজ নয়, বরং গুনাহ, এমন কথা বলা কোন আহলে সুন্নাত আলেম আছেন কি? আমি সাধারণ মত জানতে চাচ্ছি না, শুধু এমন বিবাহকে জায়েজ না বলা কোন আলেম আছেন কিনা তা জানতে চাচ্ছি।
৩) “আরবরা আরবের সমান; মাওয়ালীও মাওয়ালীর সমান। হে মাওয়ালীগণ, তোমাদের মধ্যে যারা আরবদের সাথে বিবাহ করবে, তারা অপরাধ করবে, অন্যায় করবে। আর হে আরবগণ, তোমাদের মধ্যে যারা মাওয়ালীদের সাথে বিবাহ করবে, তারা অন্যায় করবে।” এই হাদিস কি সহীহ? এবং এর অর্থ কি?
৪) বৈবাহিক ক্ষেত্রে বংশগত সমতার বিচারে আরবদেরকে অন্যান্য জাতির তুলনায় শ্রেষ্ঠ বলে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু হাদিসে বলা হয়েছে যে, তাকওয়া (ধর্মনিষ্ঠা) সম্পন্ন ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ। আপাতদৃষ্টিতে এই বৈপরীত্যকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? অর্থাৎ, আমরা তুর্কিরা কি আরবদের সমতুল্য নই?
প্রিয় ভাই/বোন,
এই প্রশ্নের উত্তরটি সংক্ষেপে নিম্নরূপ:
ধারণা এবং ভিত্তি:
বিবাহে পাত্র-পাত্রীর যোগ্য, উপযুক্ত ও সমতুল্য হওয়া প্রায় সব সমাজেই সাধারণভাবে কাম্য ও প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। সমতুল্যতার ধারণা একদিকে সমাজের নিজস্ব মূল্যবোধের উপর, অন্যদিকে বিবাহের উদ্দেশ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।
ইসলামের মৌলিক উৎস কুরআন ও সুন্নায় এমন কোনো বিধান নেই যা বলে যে, বিবাহে পাত্র-পাত্রীর মধ্যে কোনো বিশেষ মানদণ্ডে সমতা থাকা আবশ্যক। মুজতাহিদগণ নিজ নিজ যুগে প্রচলিত প্রথা, রীতি-নীতি ও সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে বিবাহে সমতার স্থান নির্ধারণের চেষ্টা করেছেন।
ফিকহে সমতা
মুজতাহিদদের সমতা বিষয়ক মতামতেরা
সেভরী এবং কেরখী
যেমন, কিছু মুজতাহিদদের মতে, বিবাহে পাত্র-পাত্রীর সমকক্ষতা বিবাহের শর্ত নয়। যেসব হাদিস মানুষের সমতার কথা বলে এবং শ্রেষ্ঠত্ব কেবল ধর্মপরায়ণতা ও নৈতিকতার ভিত্তিতেই হতে পারে বলে উল্লেখ করে,
(মুসনাদ, ৪/১৪৫, ১৫৮; ইবনুল-হুমাম, ফাতহ, ২/৪১৮)
এটি এই কথাটিকেই ব্যক্ত করে যে, যেসব মানুষের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ, তাদের বাদ দিয়ে, প্রত্যেক মানুষই অন্যের সমান।
অধিকাংশ ফুকাহার মতে
পুরুষের নারীর সমকক্ষ হওয়া আবশ্যিক। পুরুষ তার সমকক্ষ নয় এমন নারীর সাথে বিবাহ করতে পারে, কিন্তু নারী তার সমকক্ষ নয় এমন পুরুষের সাথে বিবাহ করতে পারে না।
এ পর্যন্ত একই মত পোষণকারী মুজতাহিদগণ, সমতা কোন কোন বিষয়ে অন্বেষণ করা হবে, এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। একদল মনে করেন যে, সমতা…
ধার্মিকতা এবং নৈতিকতা
তার নিজের মাঠে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
ইমাম আজম আবু হানিফার মতে
বিবাহে আবদ্ধ হতে যাওয়া দম্পতির মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে সমতা থাকা আবশ্যক:
– বংশ ও জাতীয়তা।
– পরিবারের ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার তারিখ।
– পরিবারের স্বাধীনতা লাভের তারিখ।
– সম্পদ।
– ধার্মিকতা।
– পেশা এবং কাজ।
আলোচিত একটি বিষয় হল সমতুল্যতার শর্তের ধরন এবং চুক্তির উপর এর প্রভাব।
আবু হানিফার মতে
সমতুল্যতা স্বাস্থ্যের জন্য শর্ত নয়, বরং প্রয়োজনীয়তা।
(বাধ্যবাধকতা, ধারাবাহিকতা)
এটি একটি শর্ত। উদাহরণস্বরূপ, বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত একটি মেয়ে যদি তার সমতুল্য নয় এমন কোনো পুরুষের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তাহলে মেয়ের অভিভাবক বিবাহ-চুক্তি বাতিল করতে পারেন; অন্য কথায়, এই চুক্তির ধারাবাহিকতা এবং বাধ্যতামূলকতা অভিভাবকের সম্মতির উপর নির্ভরশীল।
যেসব মুজতাহিদ সমতাকে বিবাহের বৈধতার শর্ত মনে করেন, তাদের মতে, অভিভাবকের পূর্ব সম্মতি ব্যতিরেকে সংঘটিত এ ধরনের বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে এবং পরবর্তীতে অভিভাবকের সম্মতি নিয়েও তা বৈধ করা যাবে না।
সমতুল্যতা শর্তের পতন
সমতা চাওয়ার অধিকার নারী ও তার অভিভাবক উভয়েরই। এদের মধ্যে একজনের অধিকার ত্যাগ করা বা সমতার শর্ত পালন না করা, অপরজনের অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে না। বিয়ের পর যদি অসমতা দেখা দেয়, তা বিবাহকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, চুক্তিতে প্রভাব ফেলে না। বিয়ের পর যদি কোন নারী বা তার অভিভাবক সমতার বিষয়ে প্রতারিত হয়েছে বলে বুঝতে পারে, তাহলে নারী গর্ভবতী না হওয়া পর্যন্ত তারা বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করতে পারে; গর্ভবতী হলে মামলা করার অধিকার লোপ পায়।
আবু হানিফার ইজতিহাদকে এভাবে বোঝা উচিত:
মুসলমানদের একে অপরের সমান হওয়া মানে এই নয় যে, ভিন্ন ভিন্ন মানুষ যারা বিয়ে করতে যাচ্ছে তারাও সমান হবে, সমান আচরণ পাবে; সব মানুষ সমান বলে যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে বিয়ে করবে না, বিবাহিতরা একটা পরিবার গড়বে এবং জীবন ভাগাভাগি করবে। যদি আর্থ-সামাজিক ও অন্যান্য বিষয়ে সমতা না থাকে তাহলে দাম্পত্য জীবন টিকবে না, সমস্যা দেখা দেবে। তাই শুরুতে সমতা খোঁজা উচিত।
সালাম ও দোয়ার সহিত…
প্রশ্নোত্তরে ইসলাম