প্রিয় ভাই/বোন,
তাবিয়ীন যুগে,
ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র বহু আলেম ও হাদিস বিশারদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
এঁদের অনেকেই মুজতাহিদ স্তরের ছিলেন এবং একে অপরকে কখনো অনুকরণ করতেন না। তাঁরা সাহাবা-ই-কিরামের ঐকমত্যে উপনীত হওয়া বিষয়গুলোকে হুবহু মেনে নিতেন।
তাবঈনদের যুগের সমস্ত আলোচনা, নবুওয়াতের নূরের নৈকট্যের কারণে, বরকতময় ও ফলপ্রসূ ছিল। সেই আলোচনায় অংশগ্রহণকারী আলেমদের ঈমান পাহাড়ের চেয়েও মজবুত, ইস্পাতের চেয়েও শক্তিশালী ছিল। তাঁদের বিবেক নির্মল, বুদ্ধি স্বচ্ছ ছিল। সাহাবা-ই-কিরামগণ যেভাবে নবুওয়াতের সূর্য থেকে ইসলামের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ দিকগুলো আহরণ করেছিলেন, তাঁরাও ঠিক সেই পথ অনুসরণ করেছিলেন।
কিন্তু সাহাবীদের মধ্যে মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে, তারা যার মত ও অভিমতকে অধিকতর শক্তিশালী এবং নিজেদের ইজতিহাদের সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে করতেন, তাকেই প্রাধান্য দিতেন। সাহাবীদের যুগে যার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, সেই ইজতিহাদ শাস্ত্র তাবিয়ীন যুগে তার শিখরে পৌঁছেছিল। এবং এটি একটি স্বতন্ত্র শাস্ত্রের রূপ ধারণ করেছিল।
সেই যুগ, মুজতাহিদদের কল্যাণে, সত্যই জ্ঞান ও প্রজ্ঞার এক স্বর্ণযুগে পরিণত হয়েছিল। সেই যুগের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উন্নতি ও বিকাশে, বিশেষত ইজতিহাদ শাস্ত্রে নিবেদিত করেছিলেন। কারণ তাদের দৃষ্টিতে, মানুষের ধর্মীয় সমস্যার সমাধানকল্পে কুরআন ও হাদিস থেকে বিশদ বিষয়সমূহ উদ্ভাবন ও নিষ্কাশন করাই ছিল সর্বোচ্চ লক্ষ্য।
সেই যুগে যে আলেমগণ ছিলেন, তাঁরা ছিলেন নবী করীম (সা.)-এর প্রকৃত উত্তরাধিকারী। তাঁরা পার্থিব ধন-সম্পদ, পদ-পদবী, যশ-খ্যাতি ও জাঁকজমকের মতো ক্ষণস্থায়ী গুণাবলীর পরিবর্তে শ্রেষ্ঠত্বকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এই মহাপুরুষগণ দুনিয়ার মান-সম্মানের প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেননি, কিন্তু মান-সম্মানও তাঁদের পিছু ছাড়েনি। এই সৌভাগ্যবানদের জীবন পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাঁরা দুনিয়াতে ভোগ-বিলাসিতার জন্য আসেননি, বরং এসেছিলেন কেবল গুণ ও জ্ঞানার্জনের জন্য।
সদাচার,
এটি জ্ঞান এবং উপাসনার সংমিশ্রণে গঠিত একটি মহৎ গুণ।
এর মূল ও সারমর্ম হল আল্লাহর সন্তুষ্টি, যা পার্থিব বা আধ্যাত্মিক কোন কিছুর, এমনকি জান্নাতেরও, মাধ্যম হতে পারে না। হ্যাঁ, পুণ্যবোধ পার্থিব ও কামুক সুখের চেয়ে অনেক শ্রেয়। যে আস্বাদন করেনি সে জানতে পারবে না, যে উপভোগ করেনি সে বুঝতে পারবে না।
ইসলামের ইতিহাস আমাদের দেখায় যে,
জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সবচেয়ে গৌরবময় ও ফলপ্রসূ যুগ হল আসর-ই-সাদাতের পর তাবেঈন ও তাবা-ই-তাবেঈনের যুগ।
সেকালে সমস্ত মুসলমানের মনে ধর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও প্রকৃত ভক্তি ছিল। ঈমান ও কোরআন শুধু তাদের অন্তর ও বিবেককে শাসন করত না, বরং তাদের আচার-আচরণেও তার পূর্ণ মহিমা প্রতিফলিত হত। অধিকাংশ মানুষ জ্ঞান-চর্চার আসরগুলোতে অধিকতর আগ্রহ দেখাত। তারা সেই আসরগুলোতে সংঘটিত ঘটনাবলী ও আলোচনা থেকে শিক্ষা লাভ করত। সেই যুগে সমস্ত আলেমদের প্রতিভা ও যোগ্যতা ইজতিহাদের দিকে নিবদ্ধ ছিল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই হাজার হাজার আলেম ইজতিহাদের জগতে উজ্জ্বল স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।
ইমাম-ই আজম, ইমাম-ই শাফিঈ, ইমাম-ই মালিক, ইমাম-ই আহমদ (রহঃ)
ইমাম গাজ্জালী, ইমাম রাযী, ইমাম সুয়ূতী প্রমুখ প্রতিভাশালী পণ্ডিতগণ, এই যুগে আবির্ভূত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকবর্তিকা স্বরূপ। তাঁরা নবুয়তের সূর্যের নিকটতম উত্তরাধিকারী। পরবর্তী যুগের পণ্ডিতদের থেকে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বে এই নৈকট্যের অবদান অপরিসীম। সে কারণেই পরবর্তী যুগের কোন ফকীহ এই পণ্ডিতদের সমকক্ষ হতে পারেননি। সেই যুগের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায় যে, মহান মুজতাহিদগণ সর্বদা হিকমত ও মারিফাতের উন্নয়নে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরা এই কাজে জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করেছেন।
সালাম ও দোয়ার সহিত…
প্রশ্নোত্তরে ইসলাম