– উস্তাদ শাক্ক-উল-কামার প্রসঙ্গে বুদ্ধির দ্বার উন্মুক্ত রাখা, ইচ্ছাশক্তিকে হরণ না করার নীতি থেকে কথা বলছেন। তিনি বলছেন, যদি সবাই দেখত তাহলে বাধ্যবাধকতা হত, সবাই মানত। আবু বকর আর আবু জাহেলের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকত না। আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগল:
– তার মানে কি আমরা যুক্তির বিচারে কখনো আল্লাহর অস্তিত্বের ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত হতে পারবো না?
– কারণ তারা বলে যে রিসালা-ই-নূর বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তির মাধ্যমে আল্লাহকে প্রমাণ করে। একজন মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সন্তুষ্ট হয়ে কিভাবে অস্বীকার করতে পারে? এই অংশটা আমি বুঝতে পারিনি।
প্রিয় ভাই/বোন,
– ঈমান ১০০% হতে হবে। কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকবে না। আল্লাহর অস্তিত্ব ও একত্ব প্রমাণের যে দলিলগুলো আছে, সেগুলো এই নিশ্চয়তারই প্রমাণ।
– মনের ইচ্ছাশক্তিকে সম্পূর্ণভাবে কেড়ে নেওয়ার অর্থ হল, প্রদর্শিত প্রমাণ বা অলৌকিক ঘটনাটি এমনভাবে স্পষ্ট হতে হবে যে, অন্য কোন ক্ষীণতম সম্ভাবনারও অবকাশ না থাকে। এটি ১০০% জ্ঞানেরও ঊর্ধ্বে। এখানে মনের পক্ষে অন্য কোন সম্ভাবনার কথা ভাবা অসম্ভব।
অথচ, যেহেতু ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই, তাই একটি ভিন্ন সম্ভাবনার অস্তিত্ব থাকা প্রয়োজন, তা যতই দুর্বল হোক না কেন।
– বস্তুত, হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর মত ঈমানের সর্বোচ্চ স্তরে থাকা একজন নবীও, তার বিবেক ও প্রবৃত্তিকে
“সন্তুষ্টি”
নামে
পুনরুত্থান
সে একটি জোরালো প্রমাণ দেখতে চেয়েছিল। যদি বুদ্ধির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়, তাহলে যে কোন নতুন প্রমাণের প্রয়োজন হবে।
“অসন্তুষ্টি”
এ নিয়ে কোন কথা বলা যায় না। এটি একটি বিকল্প সম্ভাবনার ধারণাকেই দূর করে।
– আমরা আবার বলি যে,
“বিবেচনার ইচ্ছাশক্তিকে কেড়ে না নেওয়া”,
এর মানে এই নয় যে, এ বিষয়ে প্রমাণের অভাব রয়েছে। শুধু, মনে একটা ধারণা জাগিয়ে তোলে।
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, মায়া এবং কল্পনার মতো ধারণার জন্যও সুযোগ দেওয়া।
মানে দাঁড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ: হযরত মূসা (আঃ) এর
আসার লাঠির দ্বারা সংঘটিত অলৌকিক ঘটনা
, হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক প্রদর্শিত
“চাঁদের দ্বিখণ্ডিতকরণ”
এমনকি এইরকম এক বিস্ময়কর অলৌকিক ঘটনাও মানুষের মন থেকে তাদের ইচ্ছাশক্তি কেড়ে নিতে পারেনি। তারা খুব দুর্বল ধারণার বশবর্তী হয়ে এটাকে জাদু বলে ধরে নিয়েছে।
– অর্থাৎ, ঈমান আনা বা না আনার ব্যাপারে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিপ্রাপ্ত মানুষ, সবচেয়ে জোরালো প্রমাণের দিকে পিঠ ফিরিয়ে সবচেয়ে দুর্বল ধারণার পিছু ছুটতে পারে। নবী করীম (সা.)-এর ঠিক পাশেই থাকা সত্ত্বেও যারা ঈমান আনেনি, তাদের অস্তিত্ব এই স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিরই প্রমাণ। তবে, যারা ঈমান এনেছে, তারা কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই ঈমান এনেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে; ঈমানদারগণ
“দুর্বল ধারণার সম্ভাবনা”
পরিবর্তে,
“জোরালো প্রমাণ”
তারা এটাকে ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়েছে। আর যারা ঈমান আনে নি,
“জোরালো প্রমাণ”
পরিবর্তে,
“দুর্বল সম্ভাবনা”
তারা তার (শয়তানের) সৃষ্ট বিভ্রমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
প্রশ্ন: অলৌকিক ঘটনা কি বিশ্বাস করতে বাধ্য করে না?
উত্তর:
অলৌকিক ঘটনা
নবীত্বকে প্রমাণ করা এবং মানুষের ইচ্ছাশক্তিকে বলপ্রয়োগে বাধ্য না করার মতো একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় থাকা।
“একমেল-ই ভেজিহ”
বলা হচ্ছে। অর্থাৎ, অলৌকিক ঘটনাগুলো এই মাত্রায় বুদ্ধির দুয়ার খুলে ইচ্ছাশক্তিকে কেড়ে নেয় না, আর এভাবেই পৃথিবী পরীক্ষার উপযোগী একটা রূপ ধারণ করে।
যেমন কোনো ওষুধের মাত্রা কম হলে তার কার্যকারিতা লোপ পায়, আবার মাত্রা বেশি হলে শরীরে ক্ষতি করে। ওষুধের পূর্ণ কার্যকারিতা ও নিরাময়ের জন্য মাত্রা ঠিকঠাক হওয়া প্রয়োজন। অলৌকিক ঘটনার ক্ষেত্রেও স্পষ্টতা ও অস্পষ্টতার মাত্রা ঠিকঠাক হওয়া প্রয়োজন, একেই বলা হয় একমল-ই-ওজিহ অর্থাৎ অলৌকিক ঘটনার পূর্ণ মাত্রায় থাকা।
যদি নবীদের কাছে আসা অলৌকিক ঘটনাগুলো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হতো, তাহলে পৃথিবীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রহস্য আর থাকতো না এবং আবু জাহেল ও আবু বকর (রাঃ) একই স্তরে ঈমান আনতে বাধ্য হতেন। তখন আমরা তাদের দুজনের মধ্যেকার গুণগত পার্থক্য কখনোই বুঝতে পারতাম না।
নবীগণ কর্তৃক প্রদর্শিত অলৌকিক ঘটনাসমূহ
ইচ্ছাশক্তিকে পরাভূত করার মতো অলৌকিক ঘটনা না ঘটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হল, এই অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও কিছু কাফের ও মুশরিকের ঈমান না আনা। আবু জাহেল ও তার মতো অনেকেই হয়তো বহু অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হয়েও ঈমান আনেনি, বরং কোন না কোনভাবে কুফর ও অস্বীকারে লিপ্ত থেকেছে।
যদি অলৌকিক ঘটনাগুলো এতই স্পষ্ট হতো যে তা ইচ্ছাশক্তিকে বিলুপ্ত করে দিত, তাহলে তাদের ঈমান আনা অবশ্যম্ভাবী হতো। ইতিহাসে এ ধরনের অনেক মুশরিক ও কাফের ছিল যারা অস্বীকারের মধ্যে ছিল, কিন্তু ঈমান আনেনি। এটাই প্রমাণ করে যে অলৌকিক ঘটনার মাত্রা ইচ্ছাশক্তি ও পরীক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
উদাহরণস্বরূপ, আকাশের তারার মতো, যা সবাই পড়তে এবং বুঝতে পারবে।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ/আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, মুহাম্মদ তাঁর রাসূল।”
যদি তা লেখা হত, তাহলে সবাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হত। এক্ষেত্রে পরীক্ষার রহস্য বিলুপ্ত হত, সবাই বাধ্য হয়ে বিশ্বাস করত এবং কয়লা-আত্মা ও হীরা-আত্মা একই স্তরে থাকত।
এই প্রজ্ঞার কারণেই, সর্বস্রষ্টা আল্লাহ এমন এক স্তরে ও মাত্রায় অলৌকিক নিদর্শন দেখিয়েছেন যা তাদের মন ও হৃদয়ের দ্বার উন্মোচন করবে, কিন্তু তাদের ঈমান আনতে বাধ্য করবে না।
এমনকি বলা যায় যে, মহাবিশ্বের সৃষ্টিগত অলৌকিক ঘটনাগুলোও এই মাত্রার। একটি ফুল, একটি মধু, একটি আপেলের মধ্যে যে শিল্প-অলৌকিকতা রয়েছে, তা নবীদের অলৌকিকতার চেয়ে কম নয়। কিন্তু অনেক মানুষ বস্তুবাদী গাফিলতির কারণে এই অলৌকিক ঘটনাগুলো বুঝতে ও প্রশংসা করতে পারে না।
সালাম ও দোয়ার সহিত…
প্রশ্নোত্তরে ইসলাম