অবাঞ্ছিত মেয়েকে বিয়ে করার বিষয়টি আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

প্রশ্নের বিবরণ


– আমি একজন ধার্মিক, নামাজ-কালামে নিয়মিত, এবং ইসলামী অনুশাসন মেনে পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধানকারী একটি মেয়ের সাথে পারিবারিকভাবে সম্বন্ধ করে বাগদান করেছি।

– কিন্তু প্রথমে আমার একদমই ভালো লাগেনি, শারীরিক ভাবেও পছন্দ হয়নি। এক বছর আগে আমাদের বাগদান হয়েছে, ৪-৫ মাস পর বিয়ে। কিন্তু আমার কোন আগ্রহ নেই।

– আমি কি ভবিষ্যতে অসুখী হবো?

উত্তর

প্রিয় ভাই/বোন,

বিবাহ হল ধর্মের পর সর্বাপেক্ষা মূল্যবান প্রতিষ্ঠান, যা মানুষকে ইহকাল ও পরকালের শান্তি দান করে। কারণ, ভিন্ন স্বভাব ও যোগ্যতাসম্পন্ন নারী-পুরুষ কেবল বিবাহের মাধ্যমেই সংসার গড়ে তুলে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে পারে এবং ইহকাল ও পরকালের সুখ লাভ করতে পারে।

এ বিষয়ে বদিউজ্জামান সাহেব বলেন:


“হ্যাঁ, মানুষের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হল এমন একটি হৃদয় পাওয়া যা তার হৃদয়ের সমতুল্য হয়, যাতে উভয় পক্ষই তাদের স্নেহ, প্রেম, উৎসাহ বিনিময় করতে পারে এবং সুখে-দুঃখে একে অপরের সাথী ও সহায়ক হতে পারে।”


(দ্রষ্টব্য: ইশারাতুল ই’জাজ, সূরা বাকারা আয়াত ২৫ এর তাফসীর)

কিন্তু, বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যে চিরস্থায়ী সাথীত্বের যাত্রা শুরু হয়, তাতে সুখের পাশাপাশি কষ্ট ও ক্লেশও থাকে। এই কষ্ট ও ক্লেশকে জয় করতে হলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সামঞ্জস্য ও মিল থাকা একান্ত প্রয়োজন।


সমন্বয়ের প্রথম অগ্রাধিকার হল ধার্মিকতা।

কারণ, “যে ব্যক্তি নারীর সাথে আধ্যাত্মিক সামঞ্জস্য (মিল) সাধন করে, হৃদয়ের সখ্য ও ঘনিষ্ঠতাকে পূর্ণতা দান করে, বাহ্যিক ও লৌকিক বন্ধুত্বকে আন্তরিক করে, (সর্বপ্রথম)

নারীর সতীত্ব, মন্দ চরিত্র থেকে পবিত্র ও নিষ্কলুষ থাকা এবং কুৎসিত দোষত্রুটি থেকে মুক্ত থাকা।



(দেখুন, পূর্বোক্ত, মাস)

কিন্তু এটা যথেষ্ট নয়। কারণ বিবাহ একটি গুরুদায়িত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে ব্যক্তিকে সেই দায়িত্ব পালনের শক্তি প্রদান করে, কিন্তু

সে তার স্ত্রী, যার সাথে সে ভালোবাসা ও স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ।

মানুষ বৈবাহিক জীবনের এবং নারী-পুরুষের সাহচর্যের ফলে যে কষ্টগুলো আসবে, তা একমাত্র তার সমতুল্য হৃদয়ের অধিকারী হয়েই কাটিয়ে উঠতে পারে, অর্থাৎ

এমন একজন জীবনসঙ্গী, যাকে সে মন থেকে ভালোবাসবে এবং যার সাথে সে সুখে ও শান্তিতে থাকবে।

ভাঁজ করা।

তাই, যে দুজন মানুষ জীবনের শেষ পর্যন্ত ভালোবাসা ও স্নেহের সাথে একসাথে থাকতে চায়, তাদের একে অপরকে সবদিক থেকে ভালোবাসতে হবে, বাহ্যিক চেহারায় একে অপরকে পছন্দ করতে হবে এবং প্রথম দেখাতেই হৃদয়ে একটা সখ্যতা অনুভব করতে হবে।

এছাড়াও, যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে সুন্দরী/সুপুরুষ মনে করে, সে অন্য কোনো কিছুর খোঁজ করবে না, তাই সে বৈবাহিক প্রতিষ্ঠানেও অনুগত থাকবে।

ইসলাম ধর্ম অনুসারে, জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে,

স্বামীর স্ত্রীর সমতুল্য হওয়া, অর্থাৎ সমকক্ষ হওয়া।

অপরিহার্য।


এই সমতুল্যতা,

ধর্মপরায়ণতা প্রথম অগ্রাধিকার হতে হবে, এবং তা সম্ভব হলে সব ক্ষেত্রে, না হলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে। শারীরিক সমতা ও সৌন্দর্যও এর মধ্যে একটি।

তবে, শারীরিক সৌন্দর্য সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি নাও হতে পারে। কারণ, পুরুষ ও নারীর বিয়ের কাছ থেকে প্রত্যাশা যেমন ভিন্ন, তেমনি এক-এক ব্যক্তিরও বিয়ের কাছ থেকে প্রত্যাশা ও অগ্রাধিকার ভিন্ন।

কারো কাছে শারীরিক সৌন্দর্য গুরুত্বপূর্ণ, আবার কারো কাছে পেশা, স্বভাব, বংশ, শিক্ষা, অর্থনৈতিক অবস্থা, পরিবার ইত্যাদি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এজন্য

ব্যক্তি,

জীবনসঙ্গী নির্বাচনের আগে অবশ্যই বিয়ের কাছ থেকে প্রত্যাশা, অগ্রাধিকার এবং আবশ্যকতাগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

বিপরীত দিকে, তাকে অবশ্যই তার কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করতে হবে।


যাদের কাছ থেকে সে প্রত্যাশা করে, সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে না এমন কাউকে তার পছন্দ করা উচিত নয়।

কারণ বিয়ের পর দম্পতিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল হতাশা। এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছানো যেখানে আর ফিরে আসার কোন পথ নেই।

আমাদের সংস্কৃতিতে, বাগদানের একটি উদ্দেশ্য হল বিয়ের যেন বিচ্ছেদে না গড়ায়, সেজন্য একে অপরকে জানা, একে অপরকে বোঝা এবং হৃদয়ের নৈকট্য আছে কিনা তা অনুভব করা।


এ বিষয়ে, লোকেদের উচিত পরিবেশের চাপে না থেকে, নিজেদের হৃদয় এবং অন্তর্দৃষ্টির কথা শোনা।

যদি তাদের মধ্যে কোন সমস্যা থাকে, তাহলে তাদের এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

তাদের এই অস্বস্তির কারণ কি কুসংস্কার, নাকি পারিপার্শ্বিক প্রভাব, নাকি মনে অন্য কোন প্রার্থী আছে, নাকি তারা অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে? নাকি তারা পাত্রীর প্রতি কোন আন্তরিকতা অনুভব করছে না এবং তাকে নিজের জন্য উপযুক্ত মনে করছে না?

যদি আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্বাচ্ছন্দ্যে দিতে পারেন, তাহলে আপনার হৃদয়ের কথা শোনা এবং আল্লাহ প্রদত্ত অন্তর্দৃষ্টির উপর ভরসা করাই শ্রেয়।

কারণ, কখনো কখনো আমাদের মন যা দেখতে পায় না, তা আমাদের হৃদয় ও অন্তর্দৃষ্টি দেখতে পায়।

তবে, যদি আপনি ধর্মপরায়ণতাকে মূল ও অপরিহার্য মাপকাঠি হিসেবে ধরে কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনার ভাগ্যে যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকুন, মনে রাখবেন যে সবকিছুর মধ্যেই কল্যাণ নিহিত থাকে, এবং সেই আয়াতটি মনে রাখুন যা বলে যে, যা আমাদের অপছন্দ তাতেই কল্যাণ থাকতে পারে। আপনার স্ত্রী ও পরিবারের প্রতি যত্নশীল হোন। কারণ,

যে ব্যক্তি তার ভাগ্যে সন্তুষ্ট থাকে, সে স্বস্তি ও শান্তি পায় এবং ইনশাআল্লাহ, সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানের সুখ লাভ করে।


সালাম ও দোয়ার সহিত…

প্রশ্নোত্তরে ইসলাম

সর্বশেষ প্রশ্ন

দিনের প্রশ্ন